বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

লাগামহীনভাবে বাড়ছে শিশু খাদ্যের দাম

লাগামহীনভাবে বাড়ছে শিশু খাদ্যের দাম

স্বদেশ ডেস্ক:

শুধু নিত্যপণ্য নয়, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে গুঁড়ো দুধসহ নানা ধরনের শিশুখাদ্যের দাম। মহামারী করোনার শুরু থেকে এ পর্যায়ে প্রায় চার-পাঁচ ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে গুঁড়া দুধের দাম। তবে সম্প্রতি গুঁড়া দুধের প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআইয়ের দেয়া মূল্যতালিকা ঘসে তুলে ফেলে ইচ্ছামতো দাম বসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, বড়দের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ভাত না পেলেও নানা খাদ্যদ্রব্য দিয়ে মেটানো যায়। কিন্তু শিশুদের ক্ষুধা দুধ ছাড়া মেটানো প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে শিশুখাদ্যের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মধ্য আয়ের বাবা-মায়েরা হিমশিম খাচ্ছে। চড়া মূল্যের বাজারে স্বল্প আয় দিয়ে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিল, খাবার, পোষাক, ওষুধসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হচ্ছে। এরপর আদরের শিশু সন্তানের খাবার কিনতে গিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

মিরপুর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আমিনা আলম নামে এক মা বলেন, শখ করে কেউ সন্তানকে বুকের দুধ না দিয়ে ফর্মুলা বা বাইরের দুধ খাওয়ায় না। বাধ্য হয়েই সন্তানের জীবন বাঁচাতে গুঁড়া দুধ দিতে হয়। তবে যে শ্রেণীর মায়েরা শখ করে বা অন্য কোনো কারণে বুকে দুধ থাকা সত্ত্বেও বাইরের দুধ খাওয়ান তাদের টাকার কমতি নেই। তাদের শিশুখাদ্য কিনতে কোনো সমস্যা হয় না। তারা অনেকে আরো বেশি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে দুধ আমদানি করেও খাওয়াতে পারেন। কিন্তু আমাদের মতো মানুষদের শিশুসন্তানরা কি না খেয়ে থাকবে। আমিনা বলেন, করোনার আগে ৪০০ গ্রামের এক কৌটা প্রাইমা-২ দুধ কিনেছেন ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। সেই দুধের দাম বেড়ে হয়েছিল ৬২০ টাকা। এখন খুচরা বাজার থেকে প্রতিটি কৌটা কিনতে হচ্ছে ৬৫০ টাকা দিয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, দুই দিন আগে ৬২০ টাকা দিয়ে দুধ কিনেছেন। অথচ গতকাল রোববার সেই দুধ কিনতে গেলে বিএসটিআইয়ের দেয়া মূল্যতালিকা তুলে ফেলে তার কাছ থেকে ৬৫০ টাকা রাখা হয়।

ফজলুর রহমান নামে একজন বলেন, একটি শিশুর জন্য বর্তমান বাজার মূল্যে সর্ব নিম্ন দামের ফর্মুলা দুধ কিনতে মাসে প্রায় ছয় হাজার টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। এক কৌটা (৪০০ গ্রামের) দুধ যায় দুই থেকে তিন দিন। প্রতিটি কৌটার বর্তমান মূল্য ৬৫০ টাকা। অথচ করোনার আগে এই একই দুধ অর্ধেকের কম দামে কেনা সম্ভব ছিল। তিনি বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম। কিন্তু বেতন বাড়ছে না কারো। এমনকি করোনার কারনে আয় কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। সেই বেতন এখনো বৃদ্ধি করা হয়নি। তার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনতিই হতাশায় পড়েছেন অনেকেই। তার মধ্যে পরিবারের আদরের ছোট্ট সন্তানকে বাঁচাতে খাওয়ানো দুধের দামও এভাবে বাড়তে থাকলে জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন নয়, বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়বে। কারণ মধ্য আয়ের মানুষ তো আর রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করতে পারবেন না। অভাবের তাড়নায় পড়ে হয়তো আত্মহত্যাই করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু প্রাইমা ব্র্যান্ডেরই নয়, নেসলে, ল্যাকটোজেন, বায়োমিল, নানসহ সব ব্র্যান্ডের দুধের মূল্যই বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সাথে বেড়েছে সেরিলাক্সসহ অন্যান্য শিশুখাদ্যের দামও।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছরে চার-পাঁচবার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ফর্মুলা দুধের। অনেক বাবাই সন্তানদের জন্য দুধ কিনতে এসে দাম শুনে হতাশ হয়ে পড়েন। এটা দেখতে আমাদের খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কোম্পানি থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়া হলে আমরা কম রাখতে পারি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসটিআইর উপপরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিটি দুধের কৌটা বা প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআইয়ের স্টিকার বা সিল দেয়া আছে। যেখানে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই মূল্যের চেয়ে বেশি নিলে অবশ্যই সেটি অপরাধ। আর স্টিকার তুলে বেশি দাম নেয়ার ঘটনা ঘটলে অবশ্যই বিএসটিআই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877